
ইসমাইল খান নিয়াজ সিলেট জেলা প্রতিনিধি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের উপর নৃশংসতা চালানো একাধিক মামলার আসামী কুখ্যাত ভুমিখেকো সিলেট মহানগর যুবলীগ নেতা নজরুল ইসলাম প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও ধরতে পারছে না পুলিশ!
জানা যায়, সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার তুরুকবাগ গ্রামের বশির মিয়ার ছেলে যুবলীগ নেতা নজরুল, একসময় সিলেট বন্দর ও লাল বাজার এলাকায় রাস্তায় হেঁটে হেঁটে মুরগী বিক্রি করতেন। তৎকালীন বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে উত্থান ঘটে নজরুলের। সিলেটের শীর্ষ দুই ভূমিখেকোর ছত্রছায়ায় শুরু করেন বেপরোয়া কর্মকান্ড। কাগজ জালিয়াতি দখল বানিজ্যের মাধ্যমে গড়ে তুলেন সাম্রাজ্য। গরীব অসহায় মানুষজনের ভূমি আত্মসাতের বদৌলতে হয়ে যান সিলেটের অঘোষিত সম্রাট।
১/১১ পরবর্তী আওয়ামী লীগ দেশের ক্ষমতায় আসলে নেতাদের প্রত্যক্ষ মদদে কোটি কোটি টাকার মালিক নজরুল বাগিয়ে নেন মহানগর যুবলীগের পদ। পূর্বের অপকর্ম ঢাকতে নজরুল মধুবন সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী কমিটির সভাপতি পদে বসেন। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান এর আশীর্বাদের আড়ালে চলতে থাকে ভয়ংকর ভুমিখেকো নজরুল এর কর্মযজ্ঞ। বিভিন্ন সময়ে তার বিরুদ্ধে মামলা মোকদ্দমা হলেও, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও রাজনৈতিক নেতাদের সাথে সখ্যতা থাকায় অবৈধ টাকায় পার পেয়ে যান।
কাগজ-পত্র জালিয়াতিতে পারদর্শী চতুর যুবলীগ নেতা নজরুল এর বিরুদ্ধে ভুমি দখল, চাঁদাবাজি, আইনজীবীকে হয়রানি, সিটি কর্পোরেশনের ইট চুরি, সাংবাদিক কে হত্যার হুমকি, মুক্তিযোদ্ধাদের উপর হামলা সহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের উপর নৃশংসতা চালানোর একাধিক মামলা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।
চাঁদাবাজির এক ঘটনায়, সিলেট জেলা বারের আইনজীবী এ্যাডভোকেট মকসুদ আহমদ সাহান বাদী হয়ে নজরুল সহ অপর তিন সহযোগীর বিরুদ্ধে সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ও দ্রুত বিচার আদালতে মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং ২২/২০২৪, পরে আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কে প্রতিবেদন দাখিল ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহপরান (রঃ) থানা কে নির্দেশ প্রদান করেন। ১২/০৯/২৪ইং তারিখে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন শাহপরান রঃ থানার সাব-ইন্সপেক্টর অনুপ কুমার চৌধুরী। প্রতিবেদনে এক আসামীর নাম বাদ দেয়ায় আদালতে নারাজি প্রদান করেন বাদী মকসুদ। পুনরায় আদালত তদন্তের জন্য সি,আই,ডি কে নির্দেশ প্রদান করেন। বর্তমানে এ্যাডভোকেট মকসুদ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মামলা সিআইডি ও পিবিআই’র তদন্তে থাকা মামলাগুলোর সঠিক প্রতিবেদন হবে কি না তা নিয়েও দেখা দিয়েছে জনমনে সংশয়।
নিজ গ্রাম তুরুকবাগ থেকে বিতাড়িত নজরুল, বর্তমানে নগরীর ৩৭ নং ওয়ার্ড আখালিয়ার টিলারগাঁও ঘাঁটি গেড়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় আওয়ামী লীগ, বিএনপি, ও জামায়াত নেতাদের আঁতাত করে নজরুল টিলার গাঁও পয়েন্টের জায়গাটি দখল করেন। ত্রিমুখী দ্বন্দ্বে থাকা জায়গাটি আত্মসাতের লক্ষে জাল কাগজ-পত্র সৃষ্টির পাশাপাশি আলিশান বাড়ি নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
সরেজমিন, নগরীর টিলারগাঁও, বড়গুল, ডলিয়া এলাকার একাধিক বাসিন্দাদের সাথে আলাপ কালে জানা যায়, নজরুল সিলেটের দুর্দান্ত ভয়ংকর ভুমিখেকো। অনেকে তাকে ভুমি মাফিয়া হিসেবে অবহিতও করেন। তার দখল আগ্রাসনে অতিষ্ঠ এলাকার সাধারণ মানুষজন। জালিয়াতির মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় করা নজরুলের ক্ষমতার দাপট অবৈধ টাকা প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের সাথে যোগসূত্র থাকায় তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে পারেন না।
গত ১৭ ডিসেম্বর এয়ারপোর্ট থানার মামলা নং ৮/২৪ জি,আর ৮৭/২৪ সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ১ম আদালতের মামলায় নজরুল কে গ্রেফতার করে এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ। ঐ মামলার বাদীর সাথে আপোষ মিমাংসা থাকায় পর দিন ১৮ ডিসেম্বর আদালত জামিন দিলে সিলেট জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান নজরুল।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলে ঐদিন নজরুল গরুর মাংস দিয়ে স্থানীয়দের ভূরিভোজন করান। তার বিরুদ্ধে যাতে কেউ কথা না বলে সেজন্য প্রায়ই এমন ভূরিভোজের আয়োজন করেন বলে জানান স্থানীয়রা।
অন্তরবর্তীকালীন সরকার ভুমি মাফিয়া নজরুল কে বিচারের মুখোমুখি না করায় জনমনে সংশয়ের পাশাপাশি দেখা দিয়েছে উদ্বেগ উৎকন্ঠা।
সিআইডি সিলেট মেট্রো ও জেলার সাব-ইন্সপেক্টর মজিবুর রহমান চৌধুরী জানান, এ্যাডভোকেট মকসুদ আহমদ সাহানের মামলা তিনি তদন্ত করছেন। তদন্তের স্বার্থে এখন কিছু বলা যাবে না। আদালতে প্রতিবেদন দিলে জানানো হবে।
পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন সিলেট কার্যালয়ে গেলে, উর্ধতন কোন কর্মকর্তার সাক্ষাৎ না পাওয়ায় বক্তব্য সংগ্রহ করা যায়নি।